কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে কারাগারে যাচ্ছেন তাঁর নিজস্ব চার চিকিৎসক।
শনিবার বেলা তিনটায় চিকিৎসকদের দেখা করার অনুমতি দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান তথ্য নিশ্চিত করে জানান, খালেদা জিয়ার চারজন চিকিৎসক আজ তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন।
চার চিকিৎসক হলেন এস এম সিদ্দিকী, ওয়াহেদুর রহমান, আবদুল কুদ্দুস, মো. মামুন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে, সরকারের তরফ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে বারবার আশ্বস্ত করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়।
গত ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।
বোর্ডের সদস্যরা হলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান (অর্থোপেডিকস), অধ্যাপক মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), অধ্যাপক টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)। এই বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খালেদা জিয়া অসুস্থ হলেও তা গুরুতর নয়। গত ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
তবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারি তৎপরতায় অনাস্থা প্রকাশ করে বিএনপি তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে। এর আগেও খালেদা জিয়ার নিজস্ব চিকিৎসকেরা একাধিকবার তাঁর সঙ্গে কারাগারে দেখা করেছেন।
এদিকে শুক্রবার রাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৫ জুন খালেদা জিয়া দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি তিন সপ্তাহ ধরে ভীষণ জ্বরে ভুগছেন, যা কোনোক্রমেই থামছে না। চিকিৎসাবিদ্যায় যেটিকে বলা হয় টিআইএ (ট্রানজিয়েন্ট স্কিমিক অ্যাটাক)। দেশনেত্রীর দুটো পা এখনও ফুলে আছে এবং তিনি শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারছেন না।
এ সময়ে রিজভী চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে তিনি যে কথাগুলো বলছেন তা সম্পূর্ণরূপে সত্য। তার অসুস্থতা নিয়ে ইতিপূর্বেও যে কথাগুলো বলা হয়েছে তা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ হলে তার স্বাস্থ্যের এতটা অবনতি হতো না। সরকারের ইচ্ছাকৃত অবহেলা ও উদাসীনতার কারণে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে মনে হয় সরকার এবং সরকার প্রভাবিত প্রশাসনযন্ত্র দেশনেত্রীকে নিয়ে কোনো গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছেন। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তারা পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রবেশ করে পৌঁনে ৬টার দিকে বের হন। এ সময়ে তারা কারও সঙ্গে কথা বলেননি। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, তাদের দুই ছেলে অভিক এস্কান্দার, অরিক এস্কান্দার ও ভাগনে ডা. মামুন।